যীশুর আশ্চর্য কাজ ও ঐশরাজ্য

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - খ্রিষ্টান ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK

সপ্তম অধ্যায়

যীশুর আশ্চর্য কাজ ও ঐশরাজ্য

প্রভু যীশুর আশ্চর্য কাজ সম্পর্কে আমরা জানি। আমরা আরও জানি, যীশুখ্রিষ্ট তাঁর আশ্চর্য কাজের মধ্য দিয়ে এই জগতে ঐশরাজ্যের উপস্থিতি প্রকাশ করেছেন। এই অধ্যায়ে আমরা ঐশরাজ্য সম্পর্কে আরও একটু গভীর জ্ঞান লাভ করব এবং ঐশরাজ্য বিস্তারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করব।

কানা নগরে বিয়ে বাড়িতে যীশুর প্রথম আশ্চর্য কাজ

এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা

• ঐশরাজ্যের অর্থ ব্যাখ্যা করতে পারব;

• যীশুর উপমা কাহিনী সম্পর্কে বর্ণনা করতে পারব; মধি ৮ম ও ৯ম অধ্যায়ে বর্ণিত আশ্চর্য কাজগুলোর মাধ্যমে ঐশরাজ্য বিস্তারে সক্রিয় হওয়ার

জন্য যীশু লোকদের আহ্বান করেন, এ বিষয়ে বর্ণনা করতে পারব;

• ঐশরাজ্য বিস্তারে যীশুর ডাকে সাড়া দিব

 

.

যীশুর আশ্চর্য কাজ ও ঐশরাজ

পাঠ ১ : ঐশরাজ্য

আমরা বিভিন্ন রাজা ও রানির অনেক গল্প শুনেছি ও বই পুস্তকের মধ্য দিয়ে তাদের জীবন ও রাজ্য সম্পর্কে জেনেছি। যেকোনো রাজারই একটি নির্দিষ্ট রাজ্য বা ভূখণ্ড এবং প্রজা, মন্ত্রীবর্গ ও সৈন্যসামন্ত থাকে। রাজা সবসময় তার রাজ্যকে রক্ষা করার জন্য কাজ করেন এবং পাশাপাশি প্রজারা কীভাবে সুখশান্তি ও আনন্দে বসবাস করতে পারে সেই ব্যবস্থা করেন। গোটা রাজ্যের শাসন ক্ষমতার সম্পূর্ণ দায়িত্ব থাকে রাজার উপর। অন্যদিকে রাজ্যকে সুন্দর ও উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রজা সাধারণের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে।

যীশুখ্রিষ্ট এই জগতে এসেছেন এমন একটি সুন্দর রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে যেখানে থাকবে ন্যায্যতা,

শান্তি, আনন্দ, ভালোবাসা, ক্ষমা, সহভাগিতা এবং এরকম আরও বিশেষ বিশেষ গুণ। ঈশ্বর সকল মানুষকে ভালোবাসেন। তাই তিনি তাঁর পুত্র যীশুখ্রিষ্টের মধ্য দিয়ে এই জগতে সেই প্রেমের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। যীশুখ্রিষ্ট এই জগতে এসেছেন পিতার ইচ্ছা পালন করতে। তিনি চেয়েছেন, তাঁর সেবার জীবন ও বাণীর মধ্য দিয়ে ঐশরাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে ।

জাগতিক রাজ্য ও ঐশরাজ্যের মধ্যে পার্থক্য

প্রথমে আমরা জাগতিক রাজ্যের কিছু বৈশিষ্ট্য এবং পরে ঐশরাজ্যের বৈশিষ্ট্যগুলো দেখব। দুই ধরনের রাজ্যের মধ্যে আমরা একটা ভুলনামূলক আলোচনা করতে পারব।

জাগতিক রাজ্য

জাগতিক রাজ্য বলতে আমরা একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড বা একটি নির্দিষ্ট এলাকাকে বুঝে থাকি। এই ভূখণ্ডের মধ্যে যা কিছু রয়েছে সমস্ত কিছু এই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। জাগতিক রাজ্যের মধ্যে ন্যায্যতা, শান্তি, আনন্দ, ভালোবাসা ইত্যাদি গুণগুলো রয়েছে। তবে এগুলোর পাশাপাশি রয়েছে ক্ষমতার দাপট, লোভ, লালসা, হিংসা, বিদ্বেষ, বিভেদ ইত্যাদি নেতিবাচক দিকসমূহ ভালো ও মন্দ নিয়েই আমাদের এই জগতের রাজ্য বা জাগতিক রাজ্য।

ঐশরাজ্য

ঐশরাজ্য হলো ঈশ্বরের রাজ্য। ঈশ্বর মানুষের জন্য যে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন, সেটি হলো ঐশরাজ্য। ঈশ্বর এই রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রভু যীশুর মধ্য দিয়ে। ঐশরাজ্য এই জগতের রাজ্যের মতো সীমানা দিয়ে পরিবেষ্টিত কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ড নয়। এটি হলো ভালোবাসা, আনন্দ, ন্যায্যতা, শান্তি, ক্ষমা, সহভাগিতা ও সহযোগিতার রাজ্য। প্রভু যীশুখ্রিষ্ট তাঁর প্রচার কাজ শুরু করেছেন এই বলে যে, ঐশ্বরাজ্য খুব কাছে এসে গেছে। তাই তিনি সকলকে মন পরিবর্তন ও মঙ্গলসমাচারে বিশ্বাস করতে আহ্বান করেছেন। যীশুখ্রিষ্ট নিজেই ঐশরাজ্যের মূর্ত প্রতীক স্বরূপ। যীশুখ্রিষ্টের মধ্য দিয়েই খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা

ঐশরাজ্যের পূর্ণ প্রকাশ । প্রভু যীশু তাঁর বাণীর মধ্য দিয়ে আমাদের মাঝে ঐশরাজ্যে প্রবেশের পথ দেখিয়ে গেছেন। তিনি যে শুধু বাণীর মধ্য দিয়ে পথ নির্দেশ দিয়েছেন তা নয়, তিনি নিজেই সেভাবে জীবন যাপন করেছেন এবং আমাদেরকে সেইরূপ জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

কাজ : কে কীভাবে ঐশরাজ্যের জন্য কাজ করতে পার তা দু'জন দু'জন করে আলোচনা কর ।

পাঠ ২ : যীশুর উপমা কাহিনী

কোনো কোনো বিষয় রয়েছে যা ভাষায় পুরোপুরিভাবে প্রকাশ করা যায় না। আর তখনই উপমা বা রূপকের ব্যবহার করা হয়। যেমন, পৃথিবীর আকার বর্ণনা দিয়ে সম্পূর্ণ বুঝানো যায় না বলে রূপকের মাধ্যমে বলা হয় যে, পৃথিবীটা কমলালেবুর মতো গোল। স্বর্গীয় পিতার অসীম ক্ষমাশীলতা বুঝাবার জন্য যীশু হারানো ছেলের উপমা দিয়েছেন। উপমা বা রূপক ব্যবহারে যদিও ঐ বিষয়টির পরোপুরিভাবে বুঝানো সম্ভব হয় না তথাপি ঐ বিষয়বস্তুর খুব কাছাকাছি যাওয়া বা ধারণা দেওয়া সম্ভব হয়

ঐশরাজ্যে প্রবেশ করার জন্য যীশুখ্রিষ্টের আমন্ত্রণ আসে উপমা বা রূপকের মধ্য দিয়ে, যা তাঁর শিক্ষার একটি সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য। সেই কারণে প্রভু যীশুখ্রিষ্ট তাঁর প্রচার কাজে ঐশরাজ্যকে সাধারণ মানুষের বোধগম্য করার জন্য বিভিন্ন রূপক বা উপমা ব্যবহার করেন। উপমার মধ্য দিয়ে লোকদের ঐশরাজ্যের ভোজসভায় নিমন্ত্রণ করলেও পাশাপাশি একটি মৌলিক সিদ্ধান্ত নিতেও আহ্বান করেন। ঐশরাজ্যে প্রবেশ করতে হলে জাগতিক বিষয়সম্পদ, আত্মীয়স্বজন, ভোগবিলাসিতা ইত্যাদি সবকিছুর প্রতি আকর্ষণ ত্যাগ করতে হবে।

বিভিন্ন রূপক বা উপমা কাহিনী

যীশু খ্রিষ্টের ব্যবহৃত রূপক বা উপমা কাহিনীগুলো আমাদের জন্য দর্পণ বা আয়নার মতো। এগুলো আমাদের জীবনের কথা বলে। প্রভু যীশু ঐশরাজ্যের মর্মসত্য প্রকাশ করার জন্য অনেক উপমা বা রূপক ব্যবহার করেছেন।

শ্যামা ঘাস ও গমের দানার উপমা

তিনি ঐশরাজ্যকে জমিতে বোনা গমের গাছ ও শ্যামা ঘাসের সাথে তুলনা করেছেন। একজন চাষি জমিতে গমের দানা বুনেছে। কিন্তু সকলে যখন ঘুমাচ্ছিল তখন শত্রু এসে গমের ক্ষেতে শ্যামা ঘাসের বীজ বুনে দিয়েছিল। গমের গাছ ও শ্যামা ঘাস দেখতে একই রকম হওয়ায় দুই-ই এক সাথে বাড়তে লাগল। যখন গমের শিষ বের হতে শুরু করল তখন শ্যামা ঘাসগুলো ধরা পড়ল তাই কর্মচারীরা এসে মনিবকে এই বিষয়ে জানাল। তারা শ্যামা ঘাসগুলো তুলে ফেলার অনুমতি চাইল। কিন্তু মনিব অনুমতি দিলেন না। তিনি দুটোকেই একসাথে বাড়তে দিতে বললেন।

যীশুর আশ্চর্য কাজ ও ঐশরাজ

কারণ মনিবের ভয় ছিল যদি কর্মচারীরা শ্যামা ঘাস তুলতে গিয়ে গমের গাছগুলোও তুলে ফেলে, তাহলে গমের ক্ষতি হবে। ফসল কাটার সময় পর্যন্ত তিনি তাদের অপেক্ষা করতে বললেন । ফসল কাটার সময় এলে তিনি ফসল কাটিয়েদের বলে দিলেন আগে শ্যামা ঘাসগুলো তুলে এনে আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে ও পরে গম তুলে এনে গোলাঘরে সঞ্চয় করতে ।

শর্ষে বীজের রূপক

স্বর্গরাজ্য বা ঐশরাজ্য বুঝাতে প্রভু যীশু শর্ষে বীজের উপমা ব্যবহার করেছেন। একজন চাষি তা একদিন নিজের জমিতে বুনে দিল। বীজ হিসাবে শর্ষে বীজ অন্যান্য বীজের চেয়ে ছোট। কিন্তু তার চারাটি অন্যান্য গুলোর চেয়ে বড়ই হয়। আর শেষে তা হয়ে ওঠে একটি পরিণত গাছ। আকাশের পাখিরাও তাতে বাসা বাঁধতে পারে।

খামিরের উপমা

যীশু ঐশরাজ্যের বিস্তার ও বৃদ্ধি বুঝাতে খামিরের উপমা ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেন, ঐশরাজ্য যেন সেই থামিরেরই মতো। একজন স্ত্রীলোক তা নিয়ে এসে তিন পাল্লা ময়দার সাথে মাখতে লাগল, যতক্ষণ না সমস্তটাই গেজে উঠে।

গুপ্তধন ও মণিমুক্তার উপমা

যীশু বললেন, ঐশরাজ্য যেন কোনো জমিতে লুকিয়ে রাখা গুপ্তধনের মতো। একটি লোক তা খুঁজে পেয়ে সেখানেই আবার তা লুকিয়ে রাখল। তারপর মনের আনন্দে গিয়ে তার যা কিছু ছিল সমস্তই বেচে দিয়ে সেই জমিটা কিনে ফেলল

আবার স্বর্গরাজ্য যেন দামি মুক্তারই মতো। একজন বণিক দামি মুক্তার খোঁজে ঘুরে বেড়াচ্ছিল । সেই বণিক একটি মহামূল্যবান মুক্তার খোঁজ পেতে না পেতেই সোজা গিয়ে তার যা-কিছু ছিল সমস্তই বেচে দিয়ে মুক্তাটি কিনে ফেলল।

জাল ভর্তি মাছের উপমা

প্রভু যীশু ঐশরাজ্যের তুলনা দিয়েছেন একটি জালের সাথে। একটি জাল সমুদ্রে ফেলা হলো এবং তাতে সব ধরনের মাছ ধরা পড়ল। জালটি ভর্তি হলে জেলেরা তা ডাঙায় টেনে তুলল আর সেখানে ভালো ভালো মাছগুলো বেছে ঝুড়িতে রাখলো আর বাজে মাছগুলো সমুদ্রে ফেলে দিল।

কাজ বাস্তব জগতে ঐশরাজ্যের কী কী চিহ্ন দেখা যায় দলীয় আলোচনার মাধ্যমে তার একটা তালিকা তৈরি করে তা শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন কর।

খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা

পাঠ ৩ : ঐশরাজ্যের কর্মী

প্রতিটি সক্ষম মানুষেরই কোনো না কোনো কাজ করে জীবন ধারণ করতে হয়। যেমন সাধু পল বলেন, সবাই যেন শান্ত স্থির হয়ে নিজেদের কাজকর্ম করে আর এইভাবে নিজেদের অন্নসংস্থান নিজেরাই করে নেয় (২ থেসা ৩:১২)। প্রভু যীশু শিষ্যদেরকে বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দিয়ে বলেন, “যে কর্মী, তার মজুরি পাবার অধিকার তো আছেই" (লুক ১০:৭)। কাজেই যে কাজ করে, সেই কর্মী। এই হিসাবে আমরা যারা নিজ নিজ দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করি, তারা সকলেই কর্মী। ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন বিভিন্ন দায়িত্ব ও কর্তব্য দিয়ে। সেই কারণে একেক জন মানুষ একেক কাজ করে জীবিকা উপার্জন করে। আমরা কোনো কোনো কাজ এই জগতে জীবনধারণের জন্য করি আবার কোনো কোনো কাজ পরজগতের জন্য করি। কোনোটি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে করি আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেবামূলক কাজের মধ্য দিয়ে ঐশরাজ্য বিস্তারের জন্য করি

ঐশরাজ্য বিস্তারের জন্য মণ্ডলীতে কর্মীর বড়ই অভাব। চারিদিকে লোকের ভিড় দেখে তাদের জন্য যীশুর দুঃখ হলো। তারা ক্লিষ্ট অবসন্ন, যেন পালকবিহীন মেঘের মতো। তাদের দেখে তাঁর করুণা হলো। তিনি তাদের বললেন, “ফসল তো প্রচুর, কিন্তু কাজ করার লোক অল্পই। তাই ফসলের মালিককে মিনতি জানাও যেন তাঁর শস্যক্ষেতে কাজ করার লোক পাঠিয়ে দেন” (মথি ৯:৩৭ ) ।

কিন্তু ঐশরাজ্যে কাজ করার জন্য যীশুর আবেদন ভিন্নতর সবাই এই কাজের জন্য আহূত। কিন্তু মনোনীত হয় অল্পই। একবার একজন শাস্ত্রী কাছে এসে যীশুকে বলল, গুরু, আপনি যেখানেই যাবেন, আমি কিন্তু সেখানেই আপনার সঙ্গে যাব। যীশু তার কথার উত্তরে বললেন, শেয়ালের থাকবার গর্ত আছে, আকাশের পাখিরও বাসা আছে, কিন্তু মানবপুত্রের মাথা গোঁজবার জায়গাটুকু নেই" (মথি ৮:২০)। আবার অন্য একজন যীশুর কাছে এসে বলল, প্রভু অনুমতি দিন আমি আগে আমার বাবাকে সমাধি দিয়ে আসি কিন্তু যীশু তাকে বললেন, “না, তুমি বরং আমার সঙ্গেই চল। মৃতদের সমাধি দেওয়ার কাজটা মৃতদের হাতেই ছেড়ে দাও” (মথি ৮:২১)।

যীশু করগ্রাহক মথিকে তাঁর পথ অনুসরণ করার কথা বলার সাথে সাথে মথি শুল্কদপ্তর ছেড়ে যীশুর সঙ্গে চলেছেন। যীশু মথির বাড়িতে নিমন্ত্রণ খেয়েছেন। তা দেখে ফরিসিরা ও শাস্ত্রীরা শিষ্যদের কাছে যীশুর সম্বন্ধে বলাবলি করতে লাগল। যীশু তাদের প্রত্যুত্তরে বললেন, "সুস্থ সবল যারা তাদের তো চিকিৎসকের কোনো প্রয়োজন হয় না; প্রয়োজন হয় তাদেরই ব্যাধিগ্রস্ত যারা আসলে, আমি তো ধার্মিকদের নয়, পাপীদের আহ্বান জানাতে এসেছি” (মথি ৯ ১২-১৩)। কাজেই দেখা যায়, ঐশরাজ্যের কর্মী হওয়ার জন্য সকল মানুষ সমানভাবে আদ্ভুত ও মনোনীত। তবে যারা নিজেদেরকে ইতিমধ্যেই পবিত্র বলে মনে করে, ঐশরাজ্যে প্রবেশের মতো নম্রতা তাদের নেই।

যীশুর আশ্চর্য কাজ ও ঐশরাজ

কাজ : তুমি কীভাবে ঐশরাজ্য বিস্তারের জন্য যীশুর আহ্বান শুনতে পাও তা ব্যক্তিগতভাবে ধ্যান করে খাতায় লেখ

পাঠ ৪ যীশুর আহ্বানে সাড়া দেওয়া

আহ্বান অর্থ হলো ডাক মানুষ মানুষকে শনাক্ত করার জন্য নাম রাখে। ঈশ্বর মানুষকে সেই নাম ধরেই ডাকেন। এক মানুষ আর এক মানুষকে ডাক দেয় তার দিকে মনোনিবেশ বা দৃষ্টি নিবন্ধ করার জন্য আমরা কারও ডাক শুনে তার দিকে আমাদের দৃষ্টি নিবন্ধ করি। শুধু তাই নয় আমরা তার ডাকে সাড়া দিতেও চেষ্টা করি।

যীশুখ্রিষ্ট তাঁর বাণী প্রচারের শুরুতে বারো জনের একটি দল গঠন করলেন। এই বারোজনের নাম তিনি দিলেন প্রেরিতদূত। প্রেরিতদূত কথাটির অর্থ হলো সেই দূত যাকে প্রেরণ করা হয়েছে। যীশু তাঁদের বিভিন্ন পেশার মানুষের মধ্য থেকে বেছে নিয়েছেন। আবার অনেকে তাঁর বাণী শুনে তাঁর অনুগামী হয়েছেন।

যীশুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রথম শিষ্যরা তাঁদের সবকিছু ফেলে রেখে যীশুর অনুসরণ করেছেন। পিতর, যাকোব, যোহন ও আন্দ্রিয়, যারা পেশায় জেলে ছিলেন, তাঁরা তাঁদের একমাত্র সম্বল নৌকা, জাল, সঙ্গীদের ও তাঁদের পিতা-মাতাদের রেখে যীশুর পিছু নিয়েছেন। করগ্রাহক মথি তাঁর এত দিনের পেশা, কর আদায় ছেড়ে দিয়ে যীশুকে গ্রহণ করেছেন এবং তাঁর বাড়িতে তাঁকে নিমন্ত্রণ করেছেন। শুধু যে বারোজন শিষ্যই যীশুকে অনুসরণ করেছিলেন, তা নয়। তাঁর বাণী শোনার জন্য লোকেরা দলে দলে তাঁর সাথে যোগ দিয়েছে।

বারোজন প্রেরিত দূতকে মনোনয়ন

যীশু সারা রাত ধরে প্রার্থনা করে সিদ্ধান্ত নিলেন সব শিষ্যদের মধ্য থেকে বিশেষ কয়েকজনকে মনোনয়ন দিতে। এরপর তিনি তাঁদের বেছে নিলেন। যে বারোজনকে তিনি বেছে নিলেন তাঁদের তিনি তাঁর কাছে ডাকলেন। তাদেরকে তিনি রোগব্যাধি সারিয়ে তোলার ও অপবিত্র যত বিদেহী আত্মাকে তাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা দিলেন। তাঁরা হলেন- সিমোন, যাঁকে পিতরও বলা হয়, আর তাঁর ভাই আন্দ্রিয়, জেবেদের ছেলে যাকোব আর যাকোবের ভাই যোহন, ফিলিপ আর বার্থলোমিয়, টমাস আর করগ্রাহক মধি, আলফেয়ের ছেলে যাকোব আর থাদেয়, উন্নধর্মী সিমোন আর যুদা ইস্কারিয়োৎ, যিনি পরে যীশুকে শত্রুদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।

আমাদের আহ্বান

প্রথম শিষ্যদের ন্যায় প্রভু যীশু প্রতিনিয়ত আমাদের আহ্বান করছেন। প্রথম শিষ্যদের ন্যায় আমাদের সবাইকেই সব কিছু ছেড়ে তাঁর অনুসরণ করতে হবে না। তিনি এই সময় আমাদের আহ্বান করেন তাঁর বাণী অনুসারে জীবন যাপন করতে, তাঁর দেখানো পথে চলতে। তবে তাঁর নির্দেশ অনুসারে জীবন যাপন করা সহজ নয়। তাই তিনি বলেছেন- "কেউ আমাকে অনুসরণ করতে চাইলে তাকে আত্মত্যাগ করতে হবে এবং নিজের ক্রুশ বহন করে চলতে হবে"। তিনি আরও বলেছেন- “কেউ যদি আমার চেয়ে তার পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনদের বেশি ভালোবাসে সে আমার শিষ্য হওয়ার যোগ্য নয়।"

কাজ: তুমি কীভাবে তোমার ব্যক্তিগত আহ্বান উপলব্ধি করে যীশুকে অনুসরণ করবে তা লেখ।

Content added || updated By

আরও দেখুন...

Promotion